মানুষের মন এক বিস্ময়কর জগৎ! প্রতিদিন আমরা যা দেখি, যা শুনি বা যা করি - তার সবকিছুর পেছনে কাজ করে আমাদের অবচেতন মনের নানা কৌশল। আজ জানবো এমন ১০টি অদ্ভুত ও কম জানা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট যা শুনলে আপনি বলবেন, "এসব কি সত্যি?"
১. "ফ্রিজে মাথা ঠান্ডা হয়" - কথাটি শুধু প্রবাদ নয়, বৈজ্ঞানিক সত্য!
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন আমরা রেগে যাই, তখন সত্যিই ফ্রিজ খুলে ভিতরের ঠান্ডা বাতাসে মুখ দিলে রাগ কমে যায়! কারণ ঠান্ডা তাপমাত্রা আমাদের অ্যামিগডালা (মস্তিষ্কের রাগ নিয়ন্ত্রক অংশ) শান্ত করতে সাহায্য করে।
২. আপনি যখন কাউকে প্রথমবার দেখেন, আপনার মস্তিষ্ক তার চেহারা 'এডিট' করে দেখায়!
আমাদের মস্তিষ্ক অদ্ভুত একটি কাজ করে - নতুন কারো মুখ দেখার সময় তা ৪০% বেশি আকর্ষণীয় করে প্রসেসিং করে! এজন্য অনেকেই বলে থাকেন "প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে"।
৩. গুগল করা আসলে আমাদের স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়!
"গুগল ইফেক্ট" নামক এই ফেনোমেনন অনুযায়ী, আমরা যখন জানি যে কোনো তথ্য পরে ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যাবে, তখন তা মনে রাখার চেষ্টাই করি না। ২০১১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০% মানুষ ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য দ্রুত ভুলে যায়!
৪. রাত ২টার পরের সব সিদ্ধান্ত ভুল!
সাইকোলজিস্টরা, রাত ২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সময়কে বলেন "অযৌক্তিক সময়"। এই সময় নেওয়া ৮৭% সিদ্ধান্তই পরবর্তীতে অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এই সময় আমাদের যুক্তি-বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের অংশটি প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকে।
৫. টাকা গুনলে ব্যথা কমে!
২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক ব্যথা অনুভব করার সময় যদি টাকা গুনতে থাকেন বা টাকার ছবি দেখেন, তাহলে ব্যথা ২৫-৩০% কম অনুভব হয়! টাকা দেখলে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয় যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।
৬. আমরা স্বপ্নে শুধুমাত্র সেই সব মুখই দেখি যাদের জীবনে একবার হলেও দেখেছি!
মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ নতুন কোনো মুখ তৈরি করতে পারে না। স্বপ্নে দেখা সব চেহারা - এমনকি ভীতিকর বা অপরিচিত মনে হওয়া মুখও - আসলে আমরা জীবনে কোথাও না কোথাও দেখেছি, হয়তো ক্ষণিকের জন্য বা অচেতনভাবে নথিভুক্ত হয়েছে আমাদের স্মৃতিতে।
৭. যখন সবাই একসাথে হাসে, তখন সবাই তার প্রিয় মানুষের দিকে তাকায়!
গবেষণায় দেখা গেছে, একদল মানুষ যখন একসাথে হাসে, তখন প্রত্যেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই ব্যক্তির দিকে তাকায় যাকে সে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে বা বিশ্বাস করে। এটা আমাদের অজান্তেই হয়ে থাকে - একধরনের প্রাকৃতিক মানসিক প্রতিক্রিয়া!
৮. বেশি বুদ্ধিমান মানুষরা নিজের সাথে বেশি কথা বলে!
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আইকিউ বেশি (বুদ্ধিমত্তা বেশি) তারা প্রায়ই নিজের সাথে জোরে বা মনে মনে কথা বলেন। এটি তাদের চিন্তা গুছিয়ে নেওয়ার এবং সমস্যা সমাধানের একটি স্বাভাবিক উপায়। আসলে, নিজের সাথে আলাপ করা সৃজনশীলতা বাড়ায় এবং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে!
৯. অতিরিক্ত ক্লান্ত অবস্থায় মানুষের মধ্যে সত্য কথা বলার সম্ভাবনা বাড়ে!
নিউরোসায়েন্টিস্টদের মতে, ক্লান্তির সময় মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (যা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে) তার কার্যক্ষমতার ৫০% পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। যার ফলে মানুষ সহজেই গোপন তথ্য বা সত্যিকারের মতামত প্রকাশ করে ফেলে।
১০. "না" শব্দটি মস্তিষ্কের জন্য প্রসেস করা কঠিন!
যখন আপনি কাউকে বলেন, "লাল গোলাপের কথা ভাববেন না", তখন তার মস্তিষ্ক প্রথমে একটি লাল গোলাপের ছবি তৈরি করে, তারপর "না" শব্দটি প্রসেস করে। এজন্য মনোবিজ্ঞানীরা ইতিবাচক ভাষা ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যেমন "সাদা ফুলের কথা ভাবুন"।
শেষ কথা
এই অজানা সাইকোলজিক্যাল তথ্যগুলো কি আপনাকে অবাক করেছে? প্রতিদিনের আচরণের পেছনে লুকিয়ে আছে এমন আরো হাজারো রহস্য! এই ১০টি ফ্যাক্টের মধ্যে কোনটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে? কমেন্টে জানান!
Comments
Post a Comment