বিড়ালই রাজা! পৃথিবীর সেই দ্বীপ যেখানে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি!

পৃথিবীতে এমন অনেক অদ্ভুত জায়গা আছে, যা শুনলে চোখ কপালে ওঠে। তবে আজ আমরা যে জায়গার কথা বলছি, সেটা শুধু অদ্ভুত না - একেবারে অ্যানিমে বা রূপকথার মতো!

জাপানের এক ছোট দ্বীপ "আওশিমা (Aoshima Island)" - যেখানে বিড়ালের সংখ্যা মানুষের চেয়ে অনেক, অনেক বেশি!
হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন! এই দ্বীপে আপনি মানুষের থেকে বেশি বিড়াল দেখতে পাবেন! চলুন, ঘুরে আসা যাক এই আজব বিড়ালের রাজ্যে:

কোথায় এই আওশিমা?

আওশিমা দ্বীপটি জাপানের এহিমে প্রদেশে অবস্থিত, শিকোকু দ্বীপের দক্ষিণাংশে। এটি একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ, মাত্র ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ! দ্বীপটিতে স্থায়ী বাসিন্দা আছেন প্রায় ১৫-২০ জন (বেশিরভাগই প্রবীণ), কিন্তু বিড়ালের সংখ্যা ১২০-১৩০টিরও বেশি!

এই অনুপাতে প্রতি মানুষ পিছু ৮-১০টি বিড়াল!
ভাবুন তো, আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, এক সারি বিড়াল আপনাকে দেখতে এসেছে!

কীভাবে হলো এই বিড়ালের দ্বীপ?

১৯৪০-এর দশকে এই দ্বীপটি ছিল এক জেলেপাড়া। এখানে জেলেরা মাছ ধরার জন্য থাকতেন। তখন ইঁদুর ছিল বড় সমস্যা, নৌকা, জাল ও খাবার নষ্ট করত।

তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে জেলেরা কিছু বিড়াল আনে। সেই বিড়ালগুলো সময়ের সাথে সাথে দ্বীপে নিজের রাজত্ব গড়ে তোলে। মানুষজন দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে থাকলেও বিড়ালদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

এখন এটি একটি ‘Cat Paradise’, যেখানে বিড়ালরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়, খেলাধুলা করে, আর মাঝে মাঝে পর্যটকদের পায়ের পাশে এসে বসে!

কেমন লাগে দ্বীপে ঘোরাঘুরি?

আওশিমায় গেলে মনে হবে আপনি কোনো অ্যানিমেটেড দুনিয়ায় এসেছেন। দ্বীপে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে শত শত চোখ, সব বিড়ালের! তারা ঘুমাচ্ছে, খেলছে, লাফাচ্ছে, কেউ কেউ হয়তো আপনার পা ঘেঁষে আদর চাইছে!

দ্বীপে নেই কোনো রেস্টুরেন্ট, হোটেল বা দোকান। আপনি শুধু বিড়ালদের রাজ্যে সময় কাটাতে পারবেন, একেবারে নিরিবিলি, প্রকৃতির কোলে।

বিড়ালের যত্ন কে নেয়?

দ্বীপের কিছু প্রবীণ বাসিন্দা প্রতিদিন নিয়ম করে বিড়ালদের খাবার দেন। পর্যটকরাও খাবার নিয়ে আসেন। এই দ্বীপে বিড়ালদের নিয়মিত টিকা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসা ক্যাম্পও হয়।

এই দ্বীপের বিড়ালরা বেশ ‘ফ্রেন্ডলি’। তারা ভীতু নয়, উলটে আপনার কোলে এসে বসে পড়তে পারে!

কীভাবে যাবেন এই বিড়ালের স্বর্গে?

  • প্রথমে আপনাকে যেতে হবে জাপানের Ozu শহরে।
  • সেখান থেকে Nagahama Port পর্যন্ত ট্রেনে বা গাড়িতে যেতে হবে।
  • Nagahama Port থেকে প্রতিদিন মাত্র ১টি ফেরি চলে আওশিমার উদ্দেশে। ফেরি চলাচল নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর।

মনে রাখবেন: দ্বীপে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই সকালে গিয়ে সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে।

কেন বিড়ালপ্রেমীদের জন্য এই দ্বীপ স্বপ্নের মতো?

  • আপনি যেখানে যাবেন, বিড়াল আপনাকে ফলো করবে।
  • তারা কোলে এসে বসবে, আদর চাইবে।
  • ছবি তুলতে চাইলে, তারা পোজও দেবে!
  • বিড়ালের মিউ-মিউ শব্দে মন শান্ত হয়ে যাবে।

আওশিমার কিছু অদ্ভুত মজার মুহূর্ত:

  • এক পর্যটক জানালেন, তিনি একটা মাছি মারার ব্যাগ খুলতেই ২০টা বিড়াল তাঁকে ঘিরে ধরে!
  • কেউ কেউ বলেন, তারা ক্যামেরা বের করতেই একটা বিড়াল এসে ক্যামেরার লেন্সে চুমু খায়!
  • আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার, এখানে বিড়ালদের কোনো ভয় নেই। তারা আপনাকে অতিথি মনে করে, আর নিজে হয়ে যায় হোস্ট!

শেষ কথা

আওশিমা দ্বীপ প্রমাণ করে, পৃথিবীতে আজও এমন জায়গা আছে যেখানে মানুষ নয়, প্রকৃতি ও প্রাণীরা রাজত্ব করে।
যদি আপনি বিড়াল প্রেমী হন, তবে এই দ্বীপে একবার ঘুরে আসা আপনার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে!

Comments