মিশরের প্রাচীন সভ্যতা আর তার ভয়ঙ্কর সব রহস্য, এই দুই শব্দ আজও রোমাঞ্চ জাগায় সারা বিশ্বের মানুষের মনে। পিরামিড, ফারাও আর মমির গায়ে জড়িয়ে আছে এমন সব গল্প, যেগুলো বাস্তব হয়েও কল্পনার চেয়েও বেশি রহস্যময়। আজ আপনাকে জানাব এক ভয়ঙ্কর বাস্তব কাহিনি, এক মমির, যে মৃত্যুর শত শত বছর পরেও "কথা বলেছিল!"
নেসিয়ামুন: সেই রহস্যময় পুরোহিত
এই মমির নাম ছিল নেসিয়ামুন (Nesyamun)। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের একজন ধর্মযাজক, যিনি আমুন দেবতার উপাসনা করতেন থিবস শহরে। তার মমিটি বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে যুক্তরাজ্যের লিডস সিটি মিউজিয়ামে।
অন্যান্য মমির মতো তার দেহও সুচারুভাবে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু বিশেষভাবে বিস্ময়কর ছিল, তার কণ্ঠনালীর (voice box) অক্ষত থাকা। এই অস্বাভাবিক সংরক্ষণই একসময় জন্ম দেয় ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক গবেষণার।
বিজ্ঞানীদের সাহসী উদ্যোগ: মৃত কণ্ঠে জীবন ফেরানো!
লন্ডন ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা CT স্ক্যান ও থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের সাহায্যে নেসিয়ামুনের কণ্ঠনালী পুনরায় নির্মাণ করেন। এই কৃত্রিম গলার অংশ দিয়ে তারা একটি শব্দ তৈরি করতে সক্ষম হন, যা ছিল “Eh” বা “Ah”-এর মতো। শুনে মনে হয়, যেন কেউ শত চেষ্টা করেও কিছু বলার চেষ্টা করছে।
এই কণ্ঠস্বর ছিল এক ধরনের সাউন্ড সিমুলেশন, নেসিয়ামুন জীবিত থাকাকালে কথা বললে তা কেমন শোনাত, সেই কণ্ঠের একটা ছায়া মাত্র। কিন্তু সেটাই ছিল ভৌতিকভাবে চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা!
রহস্যময়তা ও ভয়ের আবহ
যদিও এটি একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, অনেকেই এই ঘটনাকে ঘিরে ভয়ের গল্প ছড়িয়েছেন। কেউ বলেন, মমির উপর গবেষণা করায় অভিশাপ নেমে এসেছিল গবেষকদলের উপর। অস্বাভাবিক রোগ, মানসিক চাপ ও দুর্ঘটনা, সব মিলিয়ে ঘটনাটি ভয়ঙ্কর মোড় নেয়।
মিশরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর পর আত্মা বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য ঈশ্বরের সামনে "কথা" বলে। তাহলে কি নেসিয়ামুন মৃত্যুর পরও সেই চূড়ান্ত বক্তব্য রাখতে চাইছিলেন?
বিজ্ঞান না অতিপ্রাকৃত, আপনার বিশ্বাস কোন দিকে?
এই ঘটনা নিয়ে পৃথিবীজুড়ে আজও চলছে আলোচনা। কেউ বলেন, এটি আধুনিক প্রযুক্তির জয়। আবার অনেকেই বিশ্বাস করেন, এটি শুধু বিজ্ঞান নয়, এটা ছিল আত্মার প্রতিধ্বনি, এক মৃত মানুষের শেষ আকুতি।
যা-ই হোক না কেন, এটি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ও রহস্যময় ঘটনা।
শেষ কথা
মিশরের মমিদের ঘিরে অনেক গল্প থাকলেও, নেসিয়ামুনের কণ্ঠস্বর হয়তো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মৃত্যু মানেই সবকিছুর শেষ নয়। কখনো কখনো ইতিহাস, বিজ্ঞান আর রহস্য মিলে এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা আমাদের যুক্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়।
আপনার কী মত? নেসিয়ামুন কি সত্যিই কিছু বলতে চেয়েছিলেন? নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না!
Comments
Post a Comment