ঘুম = অলসতা? জাপানের ইনেমুরি পদ্ধতি বলছে একেবারে উল্টো কথা!

আজকের দৌড়ঝাঁপে ভরা জীবনে ঘুম যেন একপ্রকার বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিস, অনলাইন মিটিং, সোশ্যাল মিডিয়া, আর হাজারো টেনশনের ভিড়ে আমরা নিজেদের বিশ্রামের সময়টুকু হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু জাপানের একটি প্রাচীন অভ্যাস আমাদের এই সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারে। এর নাম ইনেমুরি, এমন এক ঘুমের ধরণ যা শুনলে আপনি অবাক হবেন।

‘ইনেমুরি’ শব্দটির মানে “জেগে থাকতে থাকতে ঘুমানো”। এটি এমন একটি সংক্ষিপ্ত ও হালকা ঘুম, যা জাপানিরা দিনের মধ্যে বিভিন্ন সময় নেয়, অফিসে, ট্রেনে, এমনকি মিটিং চলাকালীনও। আপনি ভাবতে পারেন, ঘুমানো কি অফিসে ঠিক? কিন্তু জাপানে ইনেমুরি দেখা হয় একধরনের কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক হিসেবে, আপনি এতটাই পরিশ্রম করেছেন যে একটু বিশ্রাম দরকার!

এই ঘুম সাধারণত ১৫-২০ মিনিটের বেশি হয় না। এতে আপনি গভীর ঘুমে যান না, বরং অল্প সময়ের জন্য মাথা হালকা করে নেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ছোট্ট ঘুম আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে দারুণভাবে সাহায্য করে। এমনকি স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়, একাগ্রতা ফিরে আসে, আর মুড ভালো থাকে।

ইনেমুরি নেওয়ার জন্য আলাদা কোনো জায়গা বা বিছানার দরকার নেই। আপনি অফিসের চেয়ারে বসে, ট্রেনের সিটে বসে, বা ডেস্কে মাথা রেখে নিতে পারেন এই ঘুম। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি আরও কার্যকর হয়, যেমন টাইমার দিয়ে সময় ঠিক করা, আরামদায়ক ভঙ্গি গ্রহণ করা, এবং ঘুমের পরে ধীরে ধীরে জাগা।

আমরা অনেকেই দিনে একটানা কাজ করে নিজেদের ক্লান্ত করে ফেলি। ইনেমুরি সেই ক্লান্তি কাটাতে একটি প্রাকৃতিক ও ক্ষতিকারকবিহীন উপায়। এটা কোনো ওষুধ নয়, কোনো থেরাপিও নয়, শুধুই শরীরকে ছোট্ট একটা বিরতি দেওয়া, যাতে সে আবার নতুন করে শক্তি পায়।

জাপানে এই অভ্যাসটি ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়। স্কুলে, অফিসে, এমনকি পারিবারিক পরিবেশেও ইনেমুরি সম্মানজনক একটি কাজ হিসেবে ধরা হয়। এটি শুধু শারীরিক বিশ্রাম নয়, এটি একটি মানসিক রিসেট। আমাদের সমাজে যদিও এখনো দিনের বেলায় ঘুমানোকে নেতিবাচক চোখে দেখা হয়, কিন্তু ইনেমুরি সেই ধারণাকে পাল্টে দিতে পারে।

ইনেমুরি শুধুই জাপানের বিষয় নয়, এটা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কাজে লাগানো সম্ভব। দিনে ১৫ মিনিট নিজেকে সময় দিন, চোখ বন্ধ করুন, এবং শরীরকে একটু বিশ্রাম দিন। আপনি দেখবেন, ঘুম থেকে উঠে আপনার কাজের গতি যেমন বাড়বে, মনও থাকবে সতেজ। ইনেমুরি আসলে আমাদের ব্যস্ত জীবনে প্রয়োজনীয় এক শান্তির পরশ।

Comments