জাপানে কিটক্যাট শুধুই একটা চকলেট না, বরং এটা তাদের সংস্কৃতির একটা অংশ আর নতুন কিছু তৈরি করার দারুণ উদাহরণ। বিশ্বের অন্য কোথাও এত বেশি স্বাদের কিটক্যাট নেই, জাপানে রয়েছে ৩০০-এরও বেশি ভিন্ন স্বাদ! চলুন, এই চমকপ্রদ কিটক্যাটের জগৎটা একটু কাছ থেকে দেখে নিই।
১. কিটক্যাটের জাপানে আগমন
ব্রিটিশ কোম্পানি রাউনট্রি ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম জাপানের বাজারে কিটক্যাটের উৎপাদন শুরু করে। এরপর সুইস কোম্পানি, নেসলে, ১৯৮৮ সালে এই ব্র্যান্ডটি কিনে নেয়।
২. বিভিন্ন ফ্লেভারের সূচনা
কিটক্যাট প্রাথমিকভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি অত্যাধুনিক নাস্তা হিসেবে বাজারজাত করা হয়েছিল, যার ফ্লেভার ছিল স্ট্রবেরি। ২০০০ সাল থেকে, নেসলে জাপানে ৩০০-এরও বেশি ফ্লেভার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে।
৩. জনপ্রিয় ফ্লেভার
জাপানে কিটক্যাটের কিছু উল্লেখযোগ্য ফ্লেভার হলো:
-
ম্যাচা (গ্রিন টি): সুস্বাদু গ্রিন টির স্বাদযুক্ত কিটক্যাট, যা জাপানের সংস্কৃতির প্রতিফলন করে।
-
ওয়াসাবি: ঝাঁঝালো ওয়াসাবি ফ্লেভার, যা সাহসী স্বাদপ্রেমীদের জন্য।
-
সাকে (জাপানি মদ): সাকে মদের সূক্ষ্ম স্বাদযুক্ত কিটক্যাট, যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে জনপ্রিয়।
-
স্ট্রবেরি চিজকেক: মিষ্টি স্ট্রবেরি এবং চিজকেকের মিশ্রণে তৈরি একটি মজাদার ফ্লেভার।
৪. আঞ্চলিক ও সীমিত সংস্করণের ফ্লেভার
জাপানের বিভিন্ন এলাকার জন্য বিশেষভাবে তৈরি কিটক্যাটের ফ্লেভার রয়েছে, যেমন:
-
শিনশু আপেল: নাগানো এলাকার বিশেষ আপেল ফ্লেভার।
-
ওকিনাওয়া বেনি ইমো (বেগুনি মিষ্টি আলু): ওকিনাওয়ার বিখ্যাত বেনি ইমো ফ্লেভার।
এছাড়াও, ঋতুভিত্তিক ও উৎসবমুখী সীমিত সংস্করণের কিটক্যাট পাওয়া যায়, যেমন চেরি ব্লসম বা শীতকালীন বিশেষ সংস্করণ।
৫. অপ্রত্যাশিত ফ্লেভার
জাপানে কিছু কিটক্যাটের স্বাদ সত্যিই চমকপ্রদ, যেমন:
-
সয় সস: মিষ্টি ও নোনতা সয় সসের স্বাদযুক্ত কিটক্যাট।
-
বেকড পটেটো: বেকড পটেটোর স্বাদ, যা আলুর প্রেমীদের আকর্ষণ করে।
-
কফ ড্রপ: গলার জন্য সুরক্ষা প্রদানকারী কফ ড্রপ স্বাদযুক্ত কিটক্যাট।
৬. কিটক্যাটের সাংস্কৃতিক প্রভাব
জাপানের সংস্কৃতিতে কিটক্যাট খুবই বিশেষ একটা জায়গা দখল করে আছে। কারণ, “কিটক্যাট” শব্দটা অনেকটা জাপানি বাক্য “কিট্টো কাতসু”-র মতো শোনায়, যার মানে “তুমি অবশ্যই জিতবে”। এই কারণে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার আগে কিটক্যাট খায় বা উপহার দেয়, যেন সৌভাগ্য আসে।
৭. সীমিত সংস্করণের জনপ্রিয়তা
নেসলে-জাপান মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য বিশেষ স্বাদের কিটক্যাট বাজারে আনে। এই রকম ফ্লেভার অনেকেই খেতে পছন্দ করে। তাই এসব কিটক্যাটের জন্য মানুষের মধ্যে অনেক উৎসাহ তৈরি হয়, আর এতে বিক্রিও অনেক বেড়ে যায়।
৮. স্বাদ তৈরির প্রক্রিয়া
নেসলে-জাপান কিটক্যাটের নতুন স্বাদ বানাতে স্থানীয় উপাদান আর সংস্কৃতি থেকে আইডিয়া নিয়ে কাজ করে। তারা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে মিলে সেই সব উপাদান দিয়ে কিটক্যাট তৈরি করে। এতে একদিকে যেমন মানুষ ভিন্ন স্বাদের কিটক্যাট খাওয়ার সুযোগ পায়, অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসাও বাড়ে।
শেষ কথা
জাপানে কিটক্যাটের এত রকম স্বাদ বিশ্বজুড়ে চকলেট প্রেমীদের কাছে খুবই মজার আর চমকপ্রদ বিষয়। এটা দেখায় জাপান কতটা সৃজনশীল এবং তাদের সংস্কৃতি কতটা বৈচিত্র্যময়। প্রতিটি নতুন স্বাদ যেন এক নতুন অভিজ্ঞতার দরজা খুলে দেয়।
Comments
Post a Comment