মাথা কাটলেও এই প্রাণী ৯ দিন বাঁচে! বিশ্বাস না হলে পড়ে দেখুন!

প্রকৃতি আমাদের প্রতিনিয়ত অবাক করে চলেছে। মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা বা তথ্য সামনে আসে, যা প্রথম শুনলে রীতিমতো অযৌক্তিক, কল্পনার মতো মনে হয়। কিন্তু বিজ্ঞান বারবার প্রমাণ করেছে যে, এই পৃথিবীতে এমন অনেক জীবন্ত বিস্ময় আছে, যাদের ক্ষমতা আমাদের চিন্তা সীমার বাইরে।

আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো এমনই এক চাঞ্চল্যকর সত্য, একটি প্রাণী মাথা কেটে ফেললেও ৯ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে! এটি কোনো সিনেমার গল্প নয়, বা কোনো রূপকথা নয়। এটি একদম বাস্তব এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত!

এই প্রাণীটি আর কেউ নয়, আমাদের অতি পরিচিত অথচ ঘৃণার বস্তু, তেলাপোকা (Cockroach)

তেলাপোকা: ঘৃণা আর বিস্ময়ের মিশেল

তেলাপোকা এমন এক পোকা, যাকে আমরা সবাই একবার না একবার ঘরে বা রান্নাঘরে দেখে চমকে উঠেছি। দ্রুত দৌড়ানো, হঠাৎ উড়ে যাওয়া, অন্ধকারে লুকিয়ে পড়া, সব মিলিয়ে এরা যেমন বিরক্তিকর, তেমনই চমকপ্রদ। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ছোট্ট পোকার শরীরে এমন কিছু অদ্ভুত ক্ষমতা আছে, যা বিজ্ঞানীদেরও অবাক করে দিয়েছে?

এর মধ্যে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য হলো, তেলাপোকার মাথা কেটে ফেলার পরও সে প্রায় ৯ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে!

এই অদ্ভুত ঘটনা কীভাবে সম্ভব?

শোনার পর প্রথমেই মনে হতে পারে, এটা কি কোনো বিজ্ঞান কল্পকাহিনি? মাথা না থাকলে তো খাওয়া, দেখা, চলাফেরা, কিছুই সম্ভব নয়! কিন্তু তেলাপোকার ক্ষেত্রে গল্পটা সম্পূর্ণ আলাদা। চলুন, একটু একটু করে বুঝে নিই, কেন এবং কীভাবে তেলাপোকা মাথা ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে:

১. তেলাপোকার রক্তচাপ নেই

আমাদের শরীরের প্রতিটি অংশ রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে কাজ করে। মাথা কাটা গেলে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণী সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়, কারণ শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যায় এবং রক্তচাপ কমে যায়।

কিন্তু তেলাপোকার রক্তচাপ সিস্টেম আমাদের মতো নয়। তাদের শরীরে “ওপেন সার্কুলেটরি সিস্টেম” রয়েছে। অর্থাৎ রক্ত দেহের চারদিকে স্রোতের মতো বইলেও তা নির্দিষ্ট রক্তনালীতে সীমাবদ্ধ নয়।

ফলে, মাথা কাটা গেলেও তাদের শরীর থেকে তেমন কোনো রক্তপাত হয় না, এই কারণে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয় না।

২. শ্বাস নেওয়ার জন্য মাথার দরকার হয় না

আমরা নাক দিয়ে শ্বাস নিই, শ্বাসনালী হয়ে অক্সিজেন ফুসফুসে যায়। কিন্তু তেলাপোকা আমাদের মতো নয়। তাদের দেহের পাশে “স্পিরাকল” (Spiracles) নামক ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলোর মাধ্যমে তারা সরাসরি বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে। অর্থাৎ, মাথা না থাকলেও তেলাপোকা দিব্যি শ্বাস নিতে পারে!

৩. মস্তিষ্ক ছাড়াও চলে ছোট ছোট কাজ

তেলাপোকার কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক থাকলেও, তাদের দেহের বিভিন্ন অংশে স্নায়ু গ্যাংলিয়া (Nerve Ganglia) নামে ছোট ছোট স্নায়ুকেন্দ্র থাকে। এই স্নায়ু গ্যাংলিয়া তেলাপোকার হাত-পা নাড়াচাড়া, চলাফেরা এবং প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কাজ করতে পারে।

তাই মাথা কেটে ফেললেও, তাদের দেহের অন্যান্য অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু সময় কাজ চালিয়ে যেতে পারে।

তাহলে তেলাপোকা মরে কখন?

আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, "ভালো কথা, মাথা কেটে বেঁচে রইল, কিন্তু একদিন না একদিন মরবেই তো?" হ্যাঁ, ঠিক তাই।

তেলাপোকা যতক্ষণ পর্যন্ত খাবার ও জল পাচ্ছে, ততক্ষণ সে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু মাথা কেটে ফেললে সে আর খেতে পারে না। ফলে পুষ্টির অভাবে ধীরে ধীরে সে মারা যায়। সাধারণত ৮ থেকে ৯ দিনের মধ্যে।

তেলাপোকা: প্রকৃতির এক বিস্ময়কর বেঁচে থাকার যন্ত্র!

বিজ্ঞানীরা বলেন, তেলাপোকা পৃথিবীতে ৩০ কোটিরও বেশি বছর ধরে বেঁচে আছে! ডাইনোসর এসেছে, বিলুপ্ত হয়েছে। তবে তেলাপোকা তার নিজের রূপ ও ক্ষমতা ধরে রেখেছে, অভিনব অভিযোজনের মাধ্যমে।

এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে, পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ হলেও, তেলাপোকা টিকে থাকতে পারবে। কারণ তারা বিকিরণ সহ্য করতে সক্ষম।

এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখি?

তেলাপোকার এই মাথাবিহীন বেঁচে থাকার ঘটনা শুধু অদ্ভুত বিষয় নয়, এটি আমাদের বোঝায়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষমতা কতটা বিস্ময়কর। ছোট ছোট জীবরা প্রকৃতির সঙ্গে কেমন করে খাপ খাইয়ে নেয়, টিকে থাকে, এবং বিবর্তনে কতটা সফল।

এটি আমাদের জন্য শিক্ষা, আমরা মানুষ, প্রযুক্তিতে উন্নত, কিন্তু প্রকৃতির প্রতিটি জীবই কিছু না কিছু এক্সট্রা পাওয়ার নিয়ে জন্মায়।

শেষ কথা

যখনই আপনি আবার তেলাপোকা দেখবেন, তখন তাকে শুধু একটা বিরক্তিকর পোকা ভাববেন না। ভেবে দেখুন, এই ছোট্ট প্রাণীটির শরীরে লুকিয়ে আছে এমন শক্তি, যা মানুষ সহ পৃথিবীর বহু প্রাণী কখনো কল্পনাও করতে পারে না।

প্রকৃতি কখনো কখনো আমাদের সামনে এমন কিছু উপস্থাপন করে, যা শুধু চোখে দেখলে নয়, মন দিয়ে উপলব্ধি করলে বোঝা যায়! আপনি কি আগে জানতেন এই অদ্ভুত তথ্য? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!

Comments