কেরালার অদ্ভুত মন্দির! যেখানে কুকুরদের নামকরণ হয় ধর্মীয় রীতিতে!

ভারতের কেরালা রাজ্যের কন্নুর জেলায় অবস্থিত পারাসিনি মন্দির প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো একটি অত্যন্ত অসাধারণ ধর্মীয় স্থান। এখানে মানুষের পাশাপাশি কুকুরদেরও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো, এখানে কুকুরদের জন্য বিশেষ নামকরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যা সত্যিই অভিনব। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই মন্দির সম্পর্কে কিছু তথ্য! 

মন্দিরের প্রধান দেবতা

এই মন্দিরের প্রধান দেবতা শ্রী মুথাপ্পন। স্থানীয় মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস যে দেবতা মুথাপ্পন কুকুরের রূপ ধারণ করেছিলেন। সেই থেকে এই মন্দিরে কুকুরদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। মন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে 'কুকুর মন্দির' নামে পরিচিত। মন্দির প্রাঙ্গণে আপনি সবসময় অনেক কুকুরকে ঘুরে বেড়াতে দেখবেন। এদের জন্য আলাদা করে থাকার জায়গা, খাবারের ব্যবস্থা সবই রয়েছে।

কুকুরের নামকরণ অনুষ্ঠান

মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো কুকুরের নামকরণ অনুষ্ঠান। যখন কোনো পরিবারে নতুন কুকুরছানা আসে, তখন অনেকেই সেটিকে নিয়ে এই মন্দিরে আসেন। সেখানে বিশেষ ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে কুকুরটির নামকরণ করা হয়। প্রথমে কুকুরটিকে ভালো করে স্নান করিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো হয়। তারপর তাকে মন্দিরের মূল প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়।

পূজারি বিশেষ কিছু মন্ত্র পাঠ করেন এবং কুকুরের কপালে চন্দনের টিপ পরিয়ে দেন। এরপর কুকুরের মালিকের ইচ্ছা ও পূজারির পরামর্শ অনুযায়ী একটি নাম নির্বাচন করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়। নামকরণ শেষে কুকুরটিকে মন্দিরের প্রসাদ হিসেবে বিশেষ কিছু খাবার দেওয়া হয়।

কুকুরের নামকরণ ও আশীর্বাদে ভরসা

স্থানীয় মানুষেরা নানান কারণে এই মন্দিরে আসেন। কেউ আসেন নতুন কুকুরের নাম রাখার জন্য, কেউ আসেন তার পোষা কুকুরের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করতে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এই মন্দিরে কুকুরের নামকরণ করালে তা শুভ ফল বয়ে আনে এবং কুকুরটি পরিবারের জন্য মঙ্গলকর হয়।

কুকুরদের জন্য আলাদা যত্নের ব্যবস্থা

মন্দির প্রাঙ্গণে কুকুরদের জন্য আলাদা একটি অংশ রয়েছে যেখানে তারা অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারে। সেখানে তাদের জন্য পরিষ্কার জল এবং নিয়মিত খাবার দেওয়া হয়। মন্দিরের একপাশে ছোট্ট একটি দোকানেও কুকুরের খাবার বিক্রি হয়, যেখানে মন্দিরে আসা Visitors তাদের পোষা কুকুরের জন্য বিশেষ প্রসাদ কিনে নিতে পারেন।

মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কুকুরদের স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়। নিয়মিত ভেটেরিনারি ডাক্তার এসে কুকুরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসাও করানো হয়। এই সব ব্যবস্থাপনা দেখলে বোঝা যায় কতটা যত্ন সহকারে এই প্রাণীদের দেখাশোনা করা হয়।

মানবিকতার নিদর্শন

এই মন্দিরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে কুকুরদের সাথে মানুষের আচরণ। সেখানে কুকুরদের কখনই তাড়ানো হয় না বা রুক্ষভাবে ব্যবহার করা হয় না। বরং সবাই তাদের স্নেহের চোখে দেখে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা নিয়মিত এসে মন্দিরের কুকুরদের খাবার দেন, তাদের সঙ্গে সময় কাটান।

ধর্মের গণ্ডি ছাড়িয়ে মানবতা ও প্রাণীপ্রেম

এই মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, এটি মানুষের সাথে প্রাণীর সম্পর্কের একটি সুন্দর উদাহরণ। এটি প্রমাণ করে যে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা শুধু মানুষের জন্য নয়, সমস্ত সৃষ্টির জন্যই প্রযোজ্য। কেরালার এই অনন্য মন্দিরটি আসলে মানবতা ও প্রাণীপ্রেমের এক জীবন্ত নিদর্শন।

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়

মন্দিরে আসা Visitorsদের মধ্যে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে আসেন শুধু এই অদ্ভুত প্রথা দেখার জন্য। বিশেষ করে যারা পশুপ্রেমী, তাদের কাছে এই মন্দির একটি must visit স্থান। অনেক বিদেশি পর্যটকও এই মন্দিরের খ্যাতি শুনে এখানে আসেন এবং এই অনন্য সংস্কৃতিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান।

পারাসিনি মন্দিরের সার্বজনীন বার্তা

এই মন্দিরের সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হলো এটি আমাদের শেখায় যে সব প্রাণীরই সম্মান পাওয়ার অধিকার আছে। ধর্মের নামে শুধু মানুষেরই নয়, বরং সমস্ত সৃষ্টির কল্যাণ কামনা করা উচিত। পারাসিনি মন্দিরের এই চর্চা আসলে একটি সার্বজনীন ধর্মীয় চেতনারই প্রতিফলন।

ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিকেও সহায়তা

মন্দিরটি স্থানীয় অর্থনীতিকেও কিছুটা সহায়তা করে। মন্দিরে আসা পর্যটকদের জন্য আশেপাশে ছোট ছোট দোকান, হোটেল গড়ে উঠেছে। অনেকেই এখানে এসে স্থানীয় হস্তশিল্প, স্যুভেনির ইত্যাদি কিনে নিয়ে যান। এভাবে এই অনন্য মন্দিরটি স্থানীয় উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।

শেষ কথা

মূলত, কেরালার এই কুকুর মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি একটি জীবন্ত প্রমাণ যে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সুন্দর সহাবস্থান সম্ভব। এটি আমাদের শেখায় যে সকল প্রাণীরই সমান অধিকার আছে এবং তাদেরও সম্মান করা উচিত। এই ধরনের ঐতিহ্য আসলে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।

Comments