একজন সাধারণ রাশিয়ান কিশোরীর অসাধারণ দাবি - তার চোখ দিয়ে মানুষের শরীরের ভেতর দেখার ক্ষমতা আছে! নাতাশা দেমকিনার এই অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে গোটা বিশ্বে হইচই পড়ে গিয়েছিল। জানুন এই রহস্যের পূর্ণাঙ্গ কাহিনী।
এক অসম্ভব দাবির সূচনা
১৯৯৭ সালের এক শীতের সন্ধ্যায় রাশিয়ার সারানস্ক শহরের দশ বছরের নাতাশা দেমকিনা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "মা, তোমার পেটের ডান পাশে আমি একটা কালো কিছু দেখতে পাচ্ছি!" পরবর্তীতে মেডিকেল পরীক্ষায় ধরা পড়ল মায়ের অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে। এই ঘটনা থেকেই শুরু হয় নাতাশার অবিশ্বাস্য দাবির যাত্রা - তার চোখ মানুষের শরীরের ভেতর দেখতে পায়।
নাতাশার বর্ণনা অনুযায়ী, সে মানুষের শরীরকে স্বচ্ছ কাচের মতো দেখতে পেত। হাড়গুলো তার চোখে ধরা পড়ত সাদা রঙে, রক্তনালীগুলো লাল রঙে, আর টিউমার বা অস্বাভাবিকতা দেখা যেত কালো দাগ হিসেবে। স্কুলের বন্ধু থেকে শুরু করে প্রতিবেশী - অনেকের শরীরের সমস্যা সে এইভাবে আগে থেকে বলে দিত।
যখন বিশ্বের নজর পড়ল তার উপর
২০০৪ সালে ডিসকভারি চ্যানেল নাতাশার এই অদ্ভুত ক্ষমতা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার আয়োজন করে যেখানে সাতজন রোগীকে নাতাশার সামনে বসানো হয়। এই রোগীদের মধ্যে ছয়জনের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিল, একজন ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ।
পরীক্ষার ফলাফল ছিল চমকপ্রদ। নাতাশা পাঁচজন রোগীর সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। একজন রোগীর ক্ষেত্রে তার নির্ণয় ছিল আংশিক সঠিক, আর একজন রোগীর ক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণ ভুল করেছিলেন। এই ফলাফল নিয়ে বিজ্ঞানীমহলে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক।
মনোবিজ্ঞানী ডা. মিখাইল ভিনোগ্রাদভ মন্তব্য করেন, "এটি নিছক অনুমানের ফল হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারও এমন সাফল্যের হার দেখাতে পারেন।" কিন্তু কিছু গবেষক মনে করেন, মানব মস্তিষ্কের এমন অজানা কিছু ক্ষমতা থাকা অসম্ভব নয়।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই দাবি
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মানুষের চোখ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মি শনাক্ত করতে পারে। এক্স-রে রশ্মি মানুষের দৃষ্টিসীমার সম্পূর্ণ বাইরে। তাছাড়া মানব মস্তিষ্ক এক্স-রে ইমেজ প্রক্রিয়াকরণের জন্য তৈরি নয়।
বিজ্ঞানীরা নাতাশার ক্ষমতার কয়েকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেন। প্রথমত, এটি হতে পারে হাইপারসেন্সিটিভ সাইনেসথেসিয়া - যেখানে একজন ব্যক্তি রঙ ও আকারের প্রতি অস্বাভাবিক সংবেদনশীল হয়। দ্বিতীয়ত, নাতাশা সম্ভবত রোগীদের সূক্ষ্ম শারীরিক লক্ষণ ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করে অনুমান করতেন। তৃতীয়ত, এটি হতে পারে পরিসংখ্যানগত সম্ভাবনার ফল।
বর্তমানে নাতাশা কোথায়?
আজ নাতাশা দেমকিনা মস্কোতে একটি বিকল্প চিকিৎসা কেন্দ্র “The Center of Special Diagnostics of the Natalya Demkina” পরিচালনা করছেন, সেখানে তিনি ও তার টিম রোগীদের শরীর স্ক্যান করে সম্ভাব্য অসুখ শনাক্ত করেন, কোনো মেশিন ছাড়াই। তিনি অনলাইনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেন এবং তার ওয়েবসাইটে দাবি করেন যে তার ডায়াগনোসিসের সঠিকতার হার ৮৩%। তবে বড় কোনো মেডিকেল প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থা তাকে নিয়োগ দেয়নি।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত রয়েছে। কেন তিনি সব রোগ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারেন না? যদি এটি প্রতারণা হয়, তাহলে কীভাবে তিনি কিছু ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্যভাবে সঠিক হন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।
শেষ কথা
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিজ্ঞান এখনও মানবদেহ ও মনের অনেক রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখে যায় - মানুষের সক্ষমতার সীমানা আসলে কোথায়?
আপনি যদি নাতাশাকে পরীক্ষা করার সুযোগ পেতেন, আপনি কীভাবে তার ক্ষমতা যাচাই করতেন? আপনি কি মনে করেন মানুষের এমন ক্ষমতা থাকা সম্ভব? কমেন্টে জানান!
Comments
Post a Comment