টাইটানিকের ৪৩টি অজানা ও গোপন তথ্য যা আপনি জানেন না!

১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল রাতের অন্ধকারে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল জাহাজ আরএমএস টাইটানিক। এই জাহাজের ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে অসংখ্য রহস্য ও অজানা তথ্য। আজ আমরা এমন ৪৩টি অবিশ্বাস্য তথ্য জানবো, যা শুনলে আপনি অবাক হবেন!

১. জাহাজটির নামকরণের রহস্য

টাইটানিক নামটি গ্রিক পুরাণের ‘টাইটান্স’ থেকে নেওয়া হয়েছে, যারা ছিল দৈত্যাকার ও শক্তিশালী। জাহাজ নির্মাতারা দাবি করেছিলেন যে এটি কখনো ডুববে না, কিন্তু ভাগ্য অন্য কিছু চেয়েছিল।

২. টাইটানিকরা তিন ভাই

টাইটানিক ছিল হোয়াইট স্টার লাইনের তিনটি অলিম্পিক-শ্রেণির জাহাজের মধ্যে দ্বিতীয়টি। প্রথমটি ছিল আরএমএস অলিম্পিক এবং তৃতীয়টি ছিল আরএমএস ব্রিটানিক (এটিও পরে ডুবে যায়)।

৩. জাহাজের বিশালতা

টাইটানিক ছিল তার সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজ, যার দৈর্ঘ্য ছিল ৮৮২ ফুট ৯ ইঞ্চি (প্রায় ২৬৯ মিটার) এবং ওজন ৪৬,৩২৮ টন!

৪. বিলাসবহুল অভ্যন্তরীণ ডিজাইন

জাহাজটিতে সুইমিং পুল, জিমন্যাসিয়াম, টেনিস কোর্ট, লাইব্রেরি এবং এমনকি একটি হাসপাতালও ছিল! প্রথম শ্রেণির কেবিনগুলো ছিল রাজকীয় প্রাসাদের মতো।

৫. ভাগ্যের নির্মম পরিহাস

জাহাজ ডুবির আগে সতর্কতা হিসেবে ছয়টি সতর্কবার্তা পেয়েও ক্যাপ্টেন স্মিথ তা গুরুত্ব দেননি।

৬. জীবননৌকার অভাব

টাইটানিকে মাত্র ২০টি লাইফবোট ছিল, যা সব যাত্রী ও ক্রুদের ধারণক্ষমতার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ!

৭. অদ্ভুত কাকতালীয়তা

১৮৯৮ সালে লেখক মরগান রবার্টসন একটি উপন্যাস লিখেছিলেন যার নাম ছিল "Futility"। সেখানে একটি জাহাজের ডুবে যাওয়ার গল্প ছিল, যার নাম ছিল "Titan" - যার সাথে টাইটানিকের মিল অবিশ্বাস্য!

৮. বেঁচে যাওয়া বিড়াল

জাহাজে একটি বিড়াল ছিল, যার নাম জেনি। এটি জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার আগেই তার বাচ্চাসহ নেমে গিয়েছিল! স্থানীয়রা বিশ্বাস করে, এটি একটি অশুভ লক্ষণ ছিল।

৯. প্রথম সতর্কবার্তা

টাইটানিকের রেডিও অপারেটর জ্যাক ফিলিপসকে অন্য একটি জাহাজ (এসএস ক্যালিফোর্নিয়া) আইসবার্গের সতর্কতা দিয়েছিল, কিন্তু তিনি তা গুরুত্ব দেননি কারণ তিনি যাত্রীদের ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠাতে ব্যস্ত ছিলেন!

১০. শেষ সময়ে বাজানো সঙ্গীত

জাহাজ ডুবে যাওয়ার সময় ব্যান্ডদলটি "Nearer, My God, to Thee" বাজাচ্ছিল, যাতে যাত্রীরা শান্ত মনে শেষ মুহূর্ত কাটাতে পারে।

১১. সবচেয়ে ধনী যাত্রী

জন জ্যাকব অ্যাস্টর IV ছিলেন টাইটানিকের সবচেয়ে ধনী যাত্রী, যার সম্পদের পরিমাণ ছিল আজকের হিসাবে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার! তিনি জাহাজ ডুবে যাওয়ার সময় মারা যান।

১২. সাহসী কুকুর

একটি নিউফাউন্ডল্যান্ড কুকুর (রিগেল নামে) তার মালিককে বাঁচাতে জল থেকে টেনে তুলেছিল এবং পরে একটি লাইফবোটে উঠেছিল!

১৩. বেঁচে যাওয়া জাপানি যাত্রী

মাসাবুমি হোসোনো নামে একজন জাপানি যাত্রী লাইফবোটে করে বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু জাপানে তাকে ‘কাপুরুষ’ বলে অপমান করা হয়েছিল কারণ তিনি নারী ও শিশুদের আগে বাঁচাননি!

১৪. টাইটানিকের ভবিষ্যদ্বাণী

১৯৮৬ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ প্রথম আবিষ্কৃত হয়, কিন্তু অনেকেই দাবি করেন যে এর অবস্থান আগেই জানা ছিল!

১৫. জাহাজের শেষ খাবার

প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের শেষ ডিনার মেনুতে ছিল ১০ কোর্সের খাবার, যার মধ্যে ওয়াইন ও বিলাসবহুল ডেজার্টও ছিল!

১৬. অদৃশ্য হওয়া মমি

একটি কিংবদন্তি আছে যে টাইটানিকে একটি অভিশপ্ত মিশরীয় মমি ছিল, যা জাহাজের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল! (যদিও এটি কেবলই গুজব।)

১৭. বরফের সতর্কতা উপেক্ষা

জাহাজটি ডুবার আগে কমপক্ষে ৬টি বরফখণ্ডের সতর্কতা পেয়েছিল, কিন্তু দ্রুত গতি কমানো হয়নি।

১৮. নারী ও শিশুদের প্রাধান্য

জাহাজ ডুবে যাওয়ার সময় “নারী ও শিশুদের প্রথম” নীতি মেনে লাইফবোটে তুলে দেওয়া হয়, কিন্তু অনেক পুরুষও ছদ্মবেশে বেঁচে গিয়েছিলেন!

১৯. টাইটানিকের চুরি

২০১২ সালে, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে জাহাজের একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক জিনিস চুরি হয়েছিল! লাস ভেগাসের একটি মিউজিয়ামে টাইটানিকের একটি আসল ঘণ্টা (যেটি জাহাজের ক্রুদের সতর্কবার্তা দিতে ব্যবহৃত হতো) প্রদর্শনী করা হচ্ছিল। কিন্তু এক রহস্যময় চোর সেটি চুরি করে নিয়ে যায়। পরে এটি উদ্ধার করা গেলেও, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে টাইটানিকের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও লোভ আজও কমেনি!

২০. জাহাজের বিল্ডিং খরচ

টাইটানিক তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৭.৫ মিলিয়ন ডলার, যা আজকের হিসাবে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার!

২১. টাইটানিকের ভূত

কিছু লোক দাবি করে যে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে ভূত দেখা যায়, বিশেষত যাত্রীদের আত্মা!

২২. জাহাজের শেষ কথাগুলো

জাহাজের রেডিও অপারেটর জ্যাক ফিলিপসের শেষ বার্তা ছিল: “Come at once. We have struck a berg.”

২৩. ডুবে যাওয়ার সময়

টাইটানিক সম্পূর্ণ ডুবে যেতে সময় নিয়েছিল ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

২৪. টাইটানিকের নির্মাণ শ্রমিকদের মৃত্যু

জাহাজ তৈরির সময় কমপক্ষে ৮ জন শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন, কিন্তু এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। দুর্ঘটনাগুলোকে গোপন রাখা হয়েছিল যাতে খারাপ প্রচার না হয়।

২৫. জাহাজের একটি চিমনি নকল ছিল

টাইটানিকের ৪টি চিমনির মধ্যে ১টি সম্পূর্ণ নকল ছিল। এটি শুধু ডিজাইনের অংশ ছিল এবং কোনো কাজে আসত না।

২৬. টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির টিকিটের দাম

একটি প্রথম শ্রেণির টিকিটের দাম ছিল ৪,৩৫০ ডলার (আজকের হিসাবে ১,২৫,০০০ ডলার)! তৃতীয় শ্রেণির টিকিট ছিল মাত্র ৩৫ ডলার।

২৭. জাহাজে ছিল একটি পোষা কুকুরের হোটেল

প্রথম শ্রেণির ধনী যাত্রীদের পোষা কুকুরের জন্য আলাদা Kennel ছিল! জাহাজে ১২টি কুকুর ছিল, যার মধ্যে মাত্র ৩টি বেঁচে গিয়েছিল।

২৮. টাইটানিকের বেঁচে যাওয়া শেষ ব্যক্তি

মিলভিনা ডিন ছিলেন টাইটানিকের সর্বশেষ জীবিত বেচে যাওয়া ব্যক্তি। তিনি তখন মাত্র ৯ সপ্তাহের শিশু ছিলেন! তিনি ২০০৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে মারা যান।

২৯. জাহাজের ইঞ্জিনের বিশালতা

টাইটানিকের ইঞ্জিনগুলো এত বড় ছিল যে সেগুলো তৈরি করতে ১০০ টনেরও বেশি স্টিল ব্যবহার করা হয়েছিল!

৩০. ডুবার আগে জাহাজটি ভেঙে দুই টুকরো হয়েছিল

১৯৮৬ সালে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের পর জানা যায়, টাইটানিক সম্পূর্ণভাবে ডুবে যায়নি, ডুবার আগেই এটি দু'ভাগে ভেঙে গিয়েছিল!

৩১. টাইটানিকের রহস্যময় অগ্নিকাণ্ড

জাহাজ যাত্রা শুরুর আগেই একটি কয়লার গুদামে আগুন লেগেছিল, যা ১০ দিন ধরে জ্বলেছিল! কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই আগুনই জাহাজের ধ্বংস ত্বরান্বিত করেছিল।

৩২. জাহাজে ছিল একটি নিজস্ব সংবাদপত্র

"আটলান্টিক ডেইলি বুলেটিন" নামে একটি দৈনিক পত্রিকা জাহাজে প্রকাশিত হতো, যাতে শেয়ার বাজার, মেনু এবং দৈনিক খবর থাকত!

৩৩. টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার স্থানটি এখন একটি সমাধিস্থল

১৯৮৬ সালে রবার্ট ব্যালার্ড ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করার পর, এই স্থানটিকে সম্মান জানিয়ে কোনো প্রকার artifact তোলা নিষিদ্ধ করা হয়।

৩৪. জাহাজের স্টিলের গুণগত মান ভালো ছিল না

পরীক্ষায় দেখা গেছে, টাইটানিকের স্টিলে উচ্চ মাত্রার সালফার ছিল, যা ঠান্ডা জলে ভঙ্গুর হয়ে যায়!

৩৫. টাইটানিকের লাশগুলো আজও সংরক্ষিত আছে

ডুবে যাওয়া যাত্রীদের কিছু লাশ সমুদ্রের নিচে এমনভাবে সংরক্ষিত হয়েছে যে তাদের জামাকাপড় এবং জুতো পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে!

৩৬. জাহাজে ছিল একটি বিশেষ "পোস্ট অফিস"

টাইটানিকে একটি সম্পূর্ণ ডাকঘর ছিল, যেখানে ৫ জন কর্মী কাজ করতেন। তারা ডুবে যাওয়ার সময় ৩,৪২৩টি চিঠি নষ্ট করে দিয়েছিলেন!

৩৭. টাইটানিকের ক্যাপ্টেনের শেষ মুহূর্ত

ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ জাহাজের ব্রিজে দাঁড়িয়েই ডুবে যান। তার শেষ কথাগুলো ছিল: "বেইল আউট, বয়েজ!"

৩৮. জাহাজের রাডার ছিল না

১৯১২ সালে রাডার আবিষ্কার হয়নি, তাই ক্রুরা সম্পূর্ণভাবে মানুষের চোখের উপর নির্ভর করত!

৩৯. টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে

জাহাজের ধ্বংসাবশেষে ব্যাকটেরিয়া (Halomonas titanicae) আক্রমণ করছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ গ্রাস করে ফেলতে পারে!

৪০. জাহাজে একটি গোপন টেলিগ্রাফ বার্তা পাঠানো হয়েছিল

একজন যাত্রী তার স্ত্রীকে টেলিগ্রাফে লিখেছিলেন: "জাহাজে প্রচুর বরফ... কিন্তু আমি নিরাপদ।" এটি তার শেষ বার্তা ছিল!

৪১. টাইটানিকের চলচ্চিত্রের সাথে মিল

১৯৯৭ সালের জেমস ক্যামেরনের চলচ্চিত্রে জ্যাক ও রোজের গল্প কাল্পনিক হলেও, অনেক দৃশ্য বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি!

৪২. জাহাজের ক্রুরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছিল

ইঞ্জিনিয়াররা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রেখেছিলেন, যাতে লাইফবোটে যাত্রীরা আলো দেখতে পায়!

৪৩. টাইটানিকের যাত্রীদের মধ্যে বিখ্যাত ব্যক্তিরা

জাহাজে ছিলেন মিলিয়নিয়ার বেঞ্জামিন গুগেনহাইম, ফ্যাশন ডিজাইনার লুসিল ডাফ গর্ডন এবং লেখক জ্যাক ফিউট্রেল!

শেষ কথা

টাইটানিকের ট্র্যাজেডি শুধু একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার গল্প নয়, এটি মানবীয় ভুল, অহংকার ও প্রকৃতির কাছে মানুষের অসহায়তার গল্প। এই ৪৩টি তথ্যের মধ্যে কোন তথ্যটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে? কমেন্টে জানান!

Comments