জানুন ঢেঁড়স ভেজানো জলের ১৩টি দারুণ স্বাস্থ্য উপকারিতা!
প্রতিদিন সকালে ঢেঁড়স ভেজানো জল খাওয়া একটি পুরানো ঘরোয়া টোটকা, যা আজকাল আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢেঁড়স, যাকে অনেকে লেডিস ফিঙ্গারও বলেন, আমাদের দেশে খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং রান্নায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই ঢেঁড়স শুধু খাওয়ার জন্য নয়, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও দারুণ কার্যকর। বিশেষ করে ঢেঁড়স ভেজানো জল পান করলে অনেক রোগের প্রতিকার হতে পারে। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই ঢেঁড়সের জলের ১৩টি উপকারিতা।
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ঢেঁড়সে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার শরীরে চিনির শোষণ কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা প্রতিদিন ঢেঁড়সের জল খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
২. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ঢেঁড়স ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখে এবং খিদে কমায়। ফলে আপনি কম খান এবং ওজন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ঢেঁড়সের জল মেটাবলিজম বাড়ায়, যা অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে।
৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
ঢেঁড়সের পিচ্ছিল অংশে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলে ভোগেন, তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।
৪. ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষা করে
ঢেঁড়সে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, যা ত্বক ও চুলের জন্য খুব ভালো। ঢেঁড়সের জল পান করলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং চুল পড়া কমে যায়।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ঢেঁড়সের জল খেলে আপনি সহজে সর্দি-কাশি বা অন্যান্য সাধারণ রোগে আক্রান্ত হবেন না।
৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ঢেঁড়সে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। উচ্চ রক্তচাপে যারা ভোগেন, তারা ঢেঁড়সের জল পান করলে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।
৭. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
ঢেঁড়স শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বের করে দিতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে হার্ট ভালো থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
৮. নারীদের হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে
মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যা, পিসিওএস এবং হরমোন জনিত সমস্যা ঢেঁড়সের জল নিয়মিত খেলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি প্রাকৃতিক হরমোন ব্যালান্সার হিসেবে কাজ করে।
৯. গাঁটের ব্যথা ও প্রদাহ কমায়
ঢেঁড়সের জল প্রদাহ বিরোধী গুণে গঠিত। যারা বাত, গাঁটের ব্যথা কিংবা পেশি ফুলে যাওয়ায় ভোগেন, তারা উপকার পেতে পারেন।
১০. কিডনি পরিষ্কার রাখে
ঢেঁড়সের জল ডিটক্স উপাদানে সমৃদ্ধ, যা কিডনি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধেও কার্যকর।
১১. পেট ঠান্ডা রাখে
বিশেষ করে গরমকালে ঢেঁড়সের জল শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে। এটি হজমে সহায়তা করে এবং শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করে।
১২. মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
মেয়েরা মাসিকের সময় অনেক সময় পেট ও কোমরে ব্যথা অনুভব করেন। ঢেঁড়সের জল খেলে এই ব্যথা অনেকটাই কমে যায় এবং শরীরও হালকা লাগে।
১৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
ঢেঁড়সের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ক্যান্সার কোষ তৈরির বিরুদ্ধে কাজ করে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢেঁড়সের জল তৈরি করার পদ্ধতি
১. রাতে ২-৩টি তাজা ঢেঁড়স ভালোভাবে ধুয়ে টুকরো টুকরো কেটে নিন।
২. এক গ্লাস জল নিয়ে ঢেঁড়সগুলো সেই জলে ভিজিয়ে রাখুন।
৩. সকালে খালি পেটে সেই জল ছেঁকে পান করুন।
চাইলে ঢেঁড়সগুলো ফেলে দিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে সেগুলো চিবিয়েও খেতে পারেন। তবে খালি পেটে খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কিছু সতর্কতা:
- যদি আপনি গর্ভবতী হন বা কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগে থাকেন, তবে ঢেঁড়সের জল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিন ১ গ্লাসই যথেষ্ট।
শেষ কথা:
ঢেঁড়স আমাদের দেশে সহজলভ্য এবং সস্তা একটি সবজি। এটি শুধু রান্নায় নয়, জলের মাধ্যমেও শরীরের অনেক উপকারে আসে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস ঢেঁড়সের জল খেলে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন, ওজন কমাতে পারেন, এমনকি বড় বড় রোগের ঝুঁকিও কমাতে পারেন।
শরীরের যত্ন নিতে ঢেঁড়সের জল একটি সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায়। আজ থেকেই এই অভ্যাস শুরু করুন, পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন!
Comments
Post a Comment