বিছানায় মাকড়সা? রইল ৭টি সহজ ও কার্যকর টিপস!

ঘর সাজানো যতই সুন্দর হোক না কেন, যদি সেখানে পোকামাকড় থাকে, বিশেষ করে বিছানায় মাকড়সা দেখা যায়, তাহলে সব আরামের অনুভূতিই নিমিষে উড়ে যায়। অনেকেই ভাবেন মাকড়সা শুধু দেয়ালে বা কোনায় জাল বুনে থাকে, কিন্তু বাস্তবে এগুলো প্রায়ই বিছানায় ঢুকে পড়ে, আর তখনই শুরু হয় অস্বস্তি। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো বিছানা থেকে মাকড়সা দূরে রাখার ৭টি সহজ, সস্তা এবং একেবারে প্রাকৃতিক উপায়।

১. নিয়মিত চাদর, বালিশ, ও কম্বল পরিষ্কার করুন

আমরা প্রতিদিন বিছানায় ঘুমাই, আর সে কারণেই আমাদের শরীর থেকে পড়ে যাওয়া ত্বকের মৃত কোষ, চুল, ঘাম ও শরীরের তেল ধীরে ধীরে চাদর, বালিশের কভার আর কম্বলে জমে থাকে। এইসব জিনিস শুধু নোংরাই নয়, বরং মাকড়সা, পিঁপড়ে কিংবা অন্যান্য ছোট ছোট পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে।

এই সমস্যা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো নিয়মিত বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও কম্বল ধোয়া। অন্তত সপ্তাহে একবার এগুলো ধুয়ে ফেললে পোকামাকড়দের আগমন অনেকটা ঠেকানো যায়।

পরামর্শ: চাদর, কভার ও কম্বল গরম জলে ধুয়ে নিন। এতে শুধু জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া দূর হয় না, বরং দুর্গন্ধও চলে যায়, আর কাপড় থাকে সতেজ ও পরিষ্কার।

২. বিছানার নিচে জিনিস রাখা বন্ধ করুন

অনেকেই নিজেদের ঘরের জায়গার সাশ্রয়ে বিছানার নিচে জুতা, পুরনো ব্যাগ, কাপড় বা নানা রকম বক্স রেখে দেন। দেখতে শুনতে মনে হতে পারে এই অভ্যাস একদম নিরীহ, কিন্তু বাস্তবে এটি মাকড়সার জন্য এক স্বর্গরাজ্য তৈরি করে! কারণ, বিছানার নিচের জায়গাটি সাধারণত অন্ধকার, নীরব ও ছায়াযুক্ত থাকে যা মাকড়সার থাকার জন্য আদর্শ পরিবেশ।

এই স্থানটিতে যদি নানান ধরণের জিনিসপত্র রাখা হয়, তাহলে তা শুধু মাকড়সার লুকিয়ে থাকার জায়গা তৈরি করে না, বরং তারা সেখানে বাসা বাঁধতে শুরু করে। ফলে রাতে হঠাৎ বিছানায় তাদের আগমন ঘটতে পারে!

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে বিছানার নিচে কিছুই রাখার অভ্যাস ত্যাগ করুন। বিছানার নিচ সবসময় খালি রাখুন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

পরামর্শ: মাসে অন্তত একবার বিছানার নিচে ভালোভাবে ঝাড়ু দিন বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন, যাতে ধুলা, ময়লা ও মাকড়সার ডিম জমা না হয়।

৩. এসেনশিয়াল অয়েল স্প্রে ব্যবহার করুন

আপনি কি জানেন, মাকড়সা কিছু নির্দিষ্ট গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না? পুদিনা, ল্যাভেন্ডার, লেবু বা কমলার মতো সুগন্ধিযুক্ত তেল মাকড়সার জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর। তাই এই তেলগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই বিছানা ও আশেপাশের এলাকা মাকড়সামুক্ত রাখতে পারেন।

একটি সাধারণ স্প্রে তৈরি করতে একটি স্প্রে বোতলে জল নিন এবং তাতে পছন্দমতো সুগন্ধি তেলের কয়েক ফোঁটা মেশান। এবার প্রতিদিন অথবা সপ্তাহে কয়েকবার বিছানার চারপাশে, চাদরে, বালিশে ও বিশেষ করে বিছানার নিচে এই মিশ্রণটি হালকা করে ছিটিয়ে দিন।

এর ফলে শুধু মাকড়সাই পালাবে না, বরং ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে এক ধরণের প্রাকৃতিক ও সতেজ সুগন্ধ, যা আপনার ঘুমের পরিবেশকেও করবে আরও শান্ত ও আরামদায়ক।

পরামর্শ: পুদিনার তেল সবচেয়ে কার্যকরী, তবে যদি এর গন্ধ বেশি তীব্র মনে হয়, তাহলে ল্যাভেন্ডার বা লেবু তেল ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঘরে এক ধরনের ‘অ্যারোমা থেরাপি’র মতো কাজ করে।

৪. বিছানাকে দেয়াল থেকে আলাদা রাখুন

অনেকেই তাদের বিছানা দেয়ালের একেবারে গায়ে লাগিয়ে রাখেন, যাতে ঘরের জায়গা বাঁচে বা দেখতে সুন্দর লাগে। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই ছোট অভ্যাসটাই মাকড়সার জন্য বিছানায় উঠার এক সহজ রাস্তা তৈরি করে দেয়?

দেয়ালের কোনা, ফাঁক বা ছোট ছোট চিড় থেকেই মাকড়সা সহজেই আপনার বিছানায় চলে আসতে পারে। তাই বিছানাকে দেয়াল থেকে অন্তত ৬ ইঞ্চি দূরে সরিয়ে রাখুন। এতে দেয়ালের সাথে বিছানার সরাসরি সংযোগ থাকবে না এবং মাকড়সার জন্য বিছানায় উঠা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে।

শুধু বিছানাই নয়, ঘরের অন্যান্য বড় ফার্নিচার, যেমন আলমারি, টেবিল বা বুকশেলফ, এইগুলোর পেছনেও মাকড়সা বাসা বাঁধতে ভালোবাসে। তাই এগুলোও দেয়াল থেকে সামান্য দূরে রাখার চেষ্টা করুন এবং মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করুন।

পরামর্শ: বিছানার চারপাশ খোলা ও বাতাস চলাচলযোগ্য রাখলে শুধু মাকড়সাই নয়, যেকোনো পোকামাকড় দূরে থাকবে, আর ঘরও হবে স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক।

৫. বিছানায় খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন

বই পড়তে পড়তে, সিনেমা দেখতে দেখতে কিংবা ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে অনেকে বিছানায় বসেই কিছু না কিছু খেয়ে ফেলেন। এক কাপ চা বা কফির সাথে বিস্কুট, বা হয়তো একমুঠো চানাচুর, এটা অনেকেরই অভ্যাস। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট ছোট খাবারের কণা বা ক্রাম্বস আপনার বিছানায় জমে থেকে এক ভয়ঙ্কর সমস্যার জন্ম দিতে পারে?

এই অদৃশ্য খাবারের টুকরোগুলো মাকড়সা ছাড়াও পিঁপড়ে, আরশোলা, বা ঘুনপোকার মতো নানা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। একবার ওরা এসে গেলে শুধু বিছানার শান্তি নয়, আপনার ঘুমও নষ্ট করে দিতে পারে।

তাই বিছানায় খাবার খাওয়া একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। বিছানা ঘুমানোর জায়গা, খাওয়া-দাওয়ার জায়গা নয়।

পরামর্শ: যদি কখনো বিছানায় খেতেই হয়, তাহলে খাওয়ার পর অবশ্যই বিছানার চাদর ঝেড়ে নিন, চারপাশ ভালো করে পরিষ্কার করুন এবং প্রয়োজনে হালকা ভ্যাকুয়াম করুন। এতে পোকামাকড়দের আকর্ষণ অনেকটাই কমে যাবে।

৬. সিলিং ফ্যান ও ল্যাম্প পরিষ্কার রাখুন

আপনার অবাক লাগতে পারে, কিন্তু মাকড়সা ছাদ থেকে নিচে নামার জন্য ঘরের ফ্যান, লাইট ফিটিং বা সিলিং ল্যাম্পকেই বেশি ব্যবহার করে। কারণ এসব জায়গা তুলনামূলকভাবে অন্ধকার, উঁচু এবং অনেক সময়ই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। ফলে এখানে জাল বোনা মাকড়সার জন্য একদম নিরাপদ ও সুবিধাজনক।

যদি নিয়মিত খেয়াল না রাখা হয়, তাহলে ফ্যানের মাথা, বাতির চারপাশ কিংবা ছাদের কোনাগুলোতে ধীরে ধীরে মাকড়সার জাল জমে যেতে থাকে। এতে ঘর যেমন অপরিচ্ছন্ন দেখায়, তেমনি জালে জমে থাকা ধুলো ও অ্যালার্জেন আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

তাই ফ্যান, লাইট ফিটিং ও সিলিং ল্যাম্প মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার করা উচিত।

পরামর্শ: পরিষ্কারের সময় অবশ্যই গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করুন, যাতে ধুলো বা অ্যালার্জেন আপনার ত্বক বা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ না করে। চাইলে একটি লম্বা হ্যান্ডেলযুক্ত ঝাড়ু বা ডাস্টার ব্যবহার করতে পারেন, যাতে সহজে পৌঁছানো যায়।

৭. ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস প্রবাহ বজায় রাখুন

মাকড়সা সাধারণত এমন পরিবেশে বাস করতে ভালোবাসে যেখানে আলো কম ও আর্দ্রতা বেশি থাকে। তাই আপনার ঘর যদি সবসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে থাকে, তাহলে তা মাকড়সার জন্য আদর্শ বাসস্থান হয়ে দাঁড়ায়। এ সমস্যার সমাধানে প্রতিদিন সকালে জানালা খুলে দিন, যেন প্রাকৃতিক আলো ঘরে প্রবেশ করতে পারে। এতে ঘর যেমন উজ্জ্বল থাকবে, তেমনি তাজা বাতাস ঘরের বাতাবরণকে মাকড়সাবিহীন রাখতে সাহায্য করবে।

যদি আপনার বাড়িতে আর্দ্রতা বেশি হয় (বিশেষত বর্ষাকালে বা রান্নাঘর-বাথরুমের আশেপাশে), তাহলে ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে সেই আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এতে ঘরের ভেজাভাব দূর হয় এবং মাকড়সার থাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।

পরামর্শ: প্রতিদিন রান্নার পর, স্নানের পর এবং বৃষ্টির দিনেও ঘরের জানালা অন্তত কিছুক্ষনের জন্য খুলে রাখুন, যাতে বাতাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং ঘর সজীব ও মাকড়সামুক্ত থাকে।

অতিরিক্ত কিছু টিপস:

  • রাতে ঘুমানোর আগে বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নিন।
  • ঘরের কোনাগুলোতে নিয়মিত ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করুন।
  • দরজার ফাঁক বা জানালার পাশ দিয়ে পোকা যাতে না ঢুকে, সেজন্য সিলিং করান।
  • ভিনেগার ও জলের মিশ্রণ স্প্রে করেও মাকড়সা তাড়ানো যায়।

শেষ কথা

মাকড়সা সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে না, তবে তারা যখন বিছানার আশেপাশে থাকে, তখন অস্বস্তি ও আতঙ্ক তৈরি হয়। উপরের সাতটি সহজ উপায় মেনে চললে আপনার ঘর ও বিছানা হবে মাকড়সামুক্ত এবং আপনার ঘুম হবে নিশ্চিন্ত ও আরামদায়ক। এই পদ্ধতিগুলো একেবারেই প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী এবং সহজে বাস্তবায়নযোগ্য। আজ থেকেই শুরু করুন এই পরিবর্তন, আর বিছানাকে করে তুলুন এক নিরাপদ স্বর্গ।

Comments