এই পৃথিবীতে নিজেকে মূল্যবান করে তোলার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুব কমই আছে। আপনি যদি চান সমাজে, কর্মস্থলে বা সম্পর্কের ভেতর নিজের গুরুত্ব বাড়াতে, তাহলে প্রথমে নিজেই নিজেকে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি কেমন ব্যবহার করছেন, কীভাবে কথা বলছেন, কেমন মনোভাব পোষণ করছেন, এই সবকিছুই নির্ধারণ করে মানুষ আপনাকে কীভাবে দেখবে।
আজকের এই ব্লগপোস্টে আমরা এমন ৬টি সহজ অথচ গভীর অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো আপনাকে ধীরে ধীরে একজন মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।
১. প্রয়োজন ছাড়া কথা বলবেন না
“কম কথা, বেশি কাজ”, এই প্রবাদটি কেবল বইয়ের পাতায় নয়, বাস্তব জীবনেও অত্যন্ত কার্যকর। আপনি যদি সব সময় ছোটখাটো বিষয়ে কথা বলেন, অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় যুক্ত হন, তবে মানুষ আপনাকে গুরুত্ব কম দিতে শুরু করবে।
যখন আপনি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না, তখন আপনার বলা প্রতিটি কথার ওজন বাড়ে। মানুষ ধরে নেয়, আপনি যখন বলছেন, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলছেন। সেই সঙ্গে, কম কথা বলার মধ্য দিয়ে আপনি নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং পরিপক্বতার পরিচয় দেন। এভাবেই ধীরে ধীরে আপনার মূল্য বাড়তে শুরু করে।
২. আগে ভালোকরে শুনুন, তারপর কথা বলুন
মানুষ সাধারণত শুনতে নয়, বলতে পছন্দ করে। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী ও বিচক্ষণ মানুষ প্রথমেই মন দিয়ে শোনেন। আপনি যদি কারো কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, তাহলে সে মানুষটি অনুভব করে, আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে তার মন আপনার প্রতি নরম হয় এবং আপনাকে সম্মান করা শুরু করে।
শুধু তাই নয়, ভালোকরে শোনা আপনাকে সঠিকভাবে উত্তর দিতে সাহায্য করে। অনেক সময় আমরা না বুঝেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলি, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝি হয় এবং আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. কেউ ডাকলে সাথে সাথে দৌড়ে চলে যাবেন না
এটা একটু ভিন্ন ধরণের পরামর্শ মনে হতে পারে, তবে এর গভীর অর্থ রয়েছে। যদি কেউ যখন-তখন আপনাকে ডাকে এবং আপনি সব সময়ই সাথে সাথে ছুটে যান, তাহলে আপনার মূল্য তার চোখে কমে যেতে পারে। এতে আপনি “সহজলভ্য” হয়ে যান।
অন্যদের সাহায্য করা অবশ্যই ভালো, কিন্তু নিজের সময় ও মর্যাদার মূল্য দিতে হবে। আপনি যদি ব্যস্ত থাকেন, বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু করছেন, তাহলে সেটা জানান। এতে অন্যরা বুঝবে আপনি সময়ের মূল্য বোঝেন এবং নিজের কাজের গুরুত্ব দিতে জানেন।
৪. নিজেকে সবসময় ব্যস্ত দেখান
মানুষ স্বভাবতই ব্যস্ত মানুষদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আপনি যদি সারাক্ষণ ফাঁকা বসে থাকেন বা অলসভাবে সময় কাটান, তাহলে কেউ আপনাকে দায়িত্বশীল ভাববে না। বরং ব্যস্ততা আপনাকে আত্মনির্ভর ও গুরুত্বপূর্ন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
অভিনয় করে ব্যস্ত দেখানো নয়, বরং সত্যিকারের ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আপনার সময়কে ব্যবহার করুন। যদি কাজ না থাকে, তবুও নিজেকে ব্যক্তিগত উন্নয়নে ব্যস্ত রাখুন, বই পড়ুন, নতুন কিছু শিখুন, কোনো প্রজেক্টে নিজে থেকে কাজ করুন।
৫. বেশি টাকা কামানোতে মনোযোগ দিন
অর্থ একমাত্র মানদণ্ড নয়, কিন্তু বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না, যার হাতে টাকার নিয়ন্ত্রণ, তার সিদ্ধান্তের প্রভাব বেশি। আপনি যদি নিজের আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন, তাহলে আর্থিকভাবে স্বাধীন হবেন। আর একজন আর্থিকভাবে স্বাধীন মানুষ কখনোই অন্যের করুণা বা মনোভাবের উপর নির্ভর করে না।
টাকা কামাতে গেলে দক্ষতা বাড়াতে হবে, নতুন কিছু শিখতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে, এইসব বিষয় আপনার আত্মবিশ্বাস এবং গুরুত্ব দুটোই বাড়িয়ে তোলে।
৬. সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন
আপনি কার সাথে কীভাবে কথা বলছেন, সেটাই বলে দেয় আপনি আসলে কেমন মানুষ। একজন রিকশাওয়ালার সাথেও যদি আপনি সম্মানের সাথে কথা বলেন, তবে মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে। কারণ সম্মান দেওয়া একটি মহান গুণ, এবং যিনি দিতে জানেন, তিনি নিজেও সম্মানের যোগ্য হন।
এছাড়া আপনি যখন সবার সাথে নম্রভাবে কথা বলেন, তখন মানুষ আপনার সান্নিধ্যে আসতে চায়, আপনাকে বিশ্বাস করে এবং মূল্য দেয়।
শেষ কথা
নিজের মূল্য বাড়ানো কোনো যাদু নয়, বরং এটা প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসের ফল। উপরের ৬টি অভ্যাস যদি আপনি নিয়মিত চর্চা করেন, তাহলে ধীরে ধীরে মানুষ আপনার কথা শুনবে, আপনার সময়ের মূল্য দেবে, এবং সবচেয়ে বড় কথা, আপনি নিজেও নিজের প্রতি গর্ববোধ করবেন।
Comments
Post a Comment