অনেকেই আছেন যারা ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট, অর্থাৎ গরুর দুধ বা অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য হজম করতে পারেন না। আবার অনেকেই ভেগান ডায়েট ফলো করেন, যেখানে গরুর দুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু তাই বলে কি দই খাওয়া বন্ধ থাকবে? একদম না! আপনি চাইলে নারকেলের দুধ থেকেই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর দই তৈরি করতে পারেন, তাও একেবারে ঘরে বসেই।
এই ব্লগে আমরা স্টেপ-বাই-স্টেপ দেখে নেব কীভাবে ঘরে নারকেলের দুধ দিয়ে দই তৈরি করবেন সহজ কিছু উপাদান ও ঘরোয়া উপায়ে।
নারকেলের দুধ দিয়ে দই তৈরি করার উপকরণ:
১. নারকেল কোরানো: ৩ কাপ
২. সবুজ মরিচের ডাঁটা (মরিচের শীর্ষ অংশ, মরিচ বাদ দিয়ে): ২-৩ টি
৩. একটি কাঁচ বা সিরামিকের বাটি
৪. একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড়
Step-by-Step পদ্ধতি:
- নারকেল কোরানো ও হালকা গরম জল ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন।
- একটি পাতলা কাপড় দিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নারকেলের দুধ আলাদা করে নিন।
- চাইলে দ্বিতীয়বার আরও জল দিয়ে পুনরায় ব্লেন্ড করে second extract পেতে পারেন, তবে দইয়ের জন্য প্রথমবারের ঘন দুধটাই সবচেয়ে ভালো।
- দুধটা হালকা গরম করুন, কিন্তু ফুটাবেন না। তাপমাত্রা যেন ৩৮–৪০°C এর মধ্যে থাকে।
- তাপমাত্রা বেশি হলে ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই সাবধানে গরম করুন।
- দুধ গরম হয়ে গেলে তার মধ্যে সবুজ মরিচের ডাঁটাগুলো দিয়ে দিন।
- এবার এই দুধটা একটা পরিষ্কার কাঁচ বা সিরামিকের বাটিতে ঢেলে নিয়ে একটু উষ্ণ জায়গাতে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ভালো করে ঢেকে রেখে দিন।
কীভাবে বোঝা যাবে দই সেট হয়ে গেছে?
- উপরের দিকে হালকা ফার্ম টেক্সচার থাকবে।
- একটু টক গন্ধ আসবে।
- চামচ দিলে জমাট বাঁধা থাকবে, তবে গরুর দুধের মতো একদম শক্ত না-ও হতে পারে।
কিছু টিপস:
- ঘন নারকেল দুধ ব্যবহার করুন। পাতলা দুধ দিলে দই ভালো সেট হয় না।
- আপনি চাইলে অল্প কর্নফ্লাওয়ার বা আগার আগার (vegan gelatin) মিশিয়ে নিতে পারেন ঘন করার জন্য।
- কাঁচ বা সিরামিক বাটিতেই দই তৈরি করুন।
- প্রতি বার নতুন দই থেকে এক চামচ রেখে দিন পরবর্তী ব্যাচের জন্য।
- নারকেল দুধে চিনি না থাকলে খেতে একটু কড়া লাগতে পারে, চাইলে সামান্য মধু বা গুড় যোগ করতে পারেন পরিবেশনের সময়।
নারকেলের দই খাওয়ার উপকারিতা:
- ১০০% ল্যাকটোজ ফ্রি, যারা দুধ হজম করতে পারেন না, তাদের জন্য আদর্শ।
- প্রোবায়োটিক থাকার কারণে এটি হজমে সাহায্য করে।
- ভেগান ও প্যালিও ডায়েট অনুসরণকারীদের জন্য দইয়ের পারফেক্ট বিকল্প।
- নারকেলের দুধে রয়েছে হেলদি ফ্যাট, যা ব্রেন ও হরমোন ব্যালেন্সে সহায়ক।
নারকেলের দই দিয়ে আরো কী কী বানানো যায়?
- ফলের সঙ্গে নারকেলের দই খেলে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ব্রেকফাস্ট হবে।
- স্মুদি বানাতে ব্যবহার করা যায়।
- সালাদে ড্রেসিং হিসেবেও নারকেলের দই দারুণ কাজ করে।
- দই-ভাতের বিকল্প হিসেবে নারকেলের দই ও ভাত খাওয়া যায়।
- ঘরোয়া ফেসপ্যাক হিসেবেও নারকেলের দই খুব উপকারী!
শেষ কথা:
দই খাওয়ার মজা ও পুষ্টি নিতে চাইলে গরুর দুধই একমাত্র উপায় নয়। নারকেলের দুধ থেকে ঘরেই সহজে ও স্বাস্থ্যকরভাবে দই তৈরি করা সম্ভব। বিশেষ করে যারা ভেগান, ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট, বা স্বাস্থ্য সচেতন, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প।
Comments
Post a Comment