রাতে অনেকেই ভাত খেতে চান না। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান বা সুগারের সমস্যায় ভোগেন, তারা প্রায়ই ভাতের পরিবর্তে রুটিকে বেছে নেন। অনেকের ধারণা, ভাতের তুলনায় রুটি বেশি স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালোরি দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাতে রুটি খাওয়া কি সত্যিই ভালো? আদৌ কি এতে শরীরের উপকার হয় নাকি ক্ষতিই বেশি হয়?
চলুন, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে জেনে নিই রোজ রাতে রুটি খাওয়ার সুফল এবং কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত।
রুটি: পুষ্টিগুণ ও ক্যালোরি
রুটি সাধারণত আটা দিয়ে তৈরি হয়। আটার রুটিতে থাকে:
- কার্বোহাইড্রেট
- ফাইবার
- প্রোটিন
- ভিটামিন বি
- মিনারেল যেমন ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস
তবে একটি মাঝারি আকারের রুটিতে প্রায় ৭১ ক্যালোরি থাকে। রাতের খাবারে যদি আপনি ২ বা ততোধিক রুটি খান, তাহলে প্রায় ১৫০ ক্যালোরি বা তার বেশি শরীরে প্রবেশ করে। যা রাতে খুব একটা দরকার হয় না, কারণ রাতে আমাদের শরীর কম সক্রিয় থাকে।
উপকারিতা: রাতে রুটি খাওয়ার কিছু ভালো দিক
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা (সীমিত মাত্রায়)
যদি আপনি ভাতের পরিবর্তে ১-২টি আটা রুটি খান এবং সঙ্গে হালকা সবজি রাখেন, তাহলে এটি অনেকটা সময় পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে।
২. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে (ডায়াবেটিকদের জন্য নির্দিষ্ট শর্তে)
ভাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি থাকে, যার ফলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ে। তুলনায় আটা রুটিতে তা কিছুটা কম। তাই সঠিক পরিমাণে খেলে রুটি কিছুটা ভালো বিকল্প হতে পারে।
৩. ফাইবারে সমৃদ্ধ
আটা রুটি ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। বিশেষ করে যারা দিনের বেলায় রুটি খান এবং পর্যাপ্ত জল পান করেন, তাদের জন্য এটি ভালো হতে পারে।
রোজ রাতে রুটি খাওয়ার সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিক
১. ক্যালোরি বেড়ে যাওয়া
রাতের খাবার সাধারণত হালকা হওয়া উচিত। কিন্তু আপনি যদি ২ বা তার বেশি রুটি খান, তাহলে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিশেষ করে যারা রাতে খেয়ে শুয়ে পড়েন, তাদের জন্য এটা আরও ক্ষতিকর।
২. হজমে সমস্যা
রুটি তুলনামূলকভাবে ধীরে হজম হয়। রাতে শরীরের বিপাক ধীর হয়ে যায়, ফলে রুটি হজমে সমস্যা করতে পারে। এতে পেটে গ্যাস, অম্বল বা অস্বস্তি হতে পারে।
৩. ব্লাড সুগার বৃদ্ধি
যদিও আটা রুটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তবে পরিমাণ বেশি হলে বা ময়দার রুটি হলে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে। ডায়াবেটিকদের জন্য এটি বিপদজনক হতে পারে।
৪. মলত্যাগের সমস্যা
রুটি খেলে অনেকেরই পেটে ব্যথা অনুভব হয়। বিশেষ করে জল কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এতে সকালে মলত্যাগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. গ্যাস-অম্বলের সমস্যা
রাতে রুটির সঙ্গে ঝাল বা তেল-মশলা যুক্ত খাবার খেলে অনেকেরই গ্যাস ও অম্বল হয়। কারণ রুটি হজম হতে সময় নেয়, আর সেই সময়ে পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি হয়।
কোন ধরনের রুটি উপকারী?
- আটা রুটি: ফাইবার ও পুষ্টিগুণ বেশি, তাই তুলনামূলক ভালো।
- ময়দার রুটি বা পরোটা: হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
- মাল্টিগ্রেইন রুটি: বেশি স্বাস্থ্যকর বিকল্প, তবে দাম বেশি।
কতটা রুটি খাওয়া নিরাপদ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে যদি রুটি খেতেই হয়, তাহলে ১-২টি আটা রুটি খাওয়া নিরাপদ। সঙ্গে সুষম পরিমাণে সবজি ও প্রোটিন (যেমন ডাল, ডিম, মাছ বা মুরগি) থাকলে সেটি আরও ভালো।
বিকল্প কী হতে পারে?
রুটি খাওয়ার বদলে রাতে আপনি চাইলে নিচের খাবারগুলো খেতে পারেন:
- ওটস বা সুজি উপমা
- মিক্স ভেজিটেবল স্যুপ
- দুধ ও ছানা
- সিদ্ধ ডিম ও সালাদ
শেষ কথা
রুটি একটি প্রচলিত ও সহজলভ্য খাবার, যা অনেকেই রাতে ভাতের বদলে খান। এটি কিছুটা উপকারি হলেও, প্রতিদিন রাতে বেশি পরিমাণে রুটি খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। ক্যালোরি বাড়ানো, হজমের সমস্যা, ব্লাড সুগার বৃদ্ধি, এমনকি গ্যাস-অম্বল, সবই হতে পারে যদি আপনি রুটির পরিমাণ ও টাইমিং ঠিক না রাখেন।
তাই, রাতে রুটি খেতে হলে তা যেন সীমিত পরিমাণে হয়, সঠিকভাবে প্রস্তুত হয় এবং সঙ্গে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার থাকে। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রুটি খাওয়া উচিত।
খাবার হোক আপনার ওষুধ, যাতে ওষুধকে খাবার না বানাতে হয় সেদিকে লক্ষ রাখবেন।
Comments
Post a Comment