বিশ্বের ৫টি সবচেয়ে দামি বিমানবন্দর! খরচ শুনলে মাথা ঘুরে যাবে!

বিমানবন্দর, শুধু একটি স্থান নয়, যেখান থেকে মানুষ প্লেনে ওঠে আর নামে। আধুনিক বিশ্বে এটি হয়ে উঠেছে দেশের গর্ব, প্রযুক্তির প্রতীক এবং অর্থনৈতিক শক্তির পরিচয়। বর্তমানে এমন কিছু বিমানবন্দর রয়েছে, যেগুলো নির্মাণে খরচ হয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার! অবকাঠামো, ডিজাইন, প্রযুক্তি, বিলাসিতা, সবকিছুতেই এই বিমানবন্দরগুলো যেন একেকটি রাজপ্রাসাদ।

চলুন জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে দামি (Highest Construction Cost) ৫টি বিমানবন্দর সম্পর্কে।

১. হামাদ ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর (Hamad International Airport), কাতার

  • নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
  • প্রতিষ্ঠা: ২০১৪
  • অবস্থান: দোহা, কাতার

হামাদ বিমানবন্দর শুধু দামের দিক থেকেই নয়, বরং সৌন্দর্য এবং অভিজাততার দিক থেকেও সেরা। এটি কাতার এয়ারওয়েজের হাব এবং ২০২২ সালের বিশ্বকাপের সময় এর নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়।

বিশেষত্ব:

  • বিমানবন্দরের ভিতরে রয়েছে জৈব উদ্যান, ঝরনা ও কাচ দিয়ে তৈরি বিশাল ছাদ
  • নিজস্ব হোটেল, স্পা, সুইমিং পুল ও জিম
  • AI-ভিত্তিক ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম

২. ইস্তানবুল বিমানবন্দর (Istanbul Airport), তুরস্ক

  • নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
  • প্রতিষ্ঠা: ২০১৮
  • অবস্থান: ইস্তানবুল, তুরস্ক

ইস্তানবুল বিমানবন্দর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি এবং আধুনিকতম এয়ারপোর্টগুলোর একটি। এটি ২০১৮ সালে চালু হয় এবং পরবর্তীতে আরও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে এটি সম্পূর্ণরূপে চালু হলে বছরে প্রায় ২০ কোটি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে, যা বিশ্বের যেকোনো বিমানবন্দরের তুলনায় বেশি।

বিশেষত্ব:

  • ৬টি রানওয়ে
  • বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিউটি-ফ্রি শপ
  • ৭৬.৫ মিলিয়ন স্কয়ার মিটার এলাকা
  • সম্পূর্ণ ডিজিটাল সিস্টেম ও রোবট প্রযুক্তির ব্যবহার

৩. বেইজিং ড্যাক্সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Beijing Daxing International Airport), চীন

  • নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
  • প্রতিষ্ঠা: ২০১৯
  • অবস্থান: বেইজিং, চীন

এই বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়েছে মাত্র ৫ বছরে, এবং এটি আকারে এতটাই বিশাল যে একে বলা হয় "Starfish Airport" (তারামাছের মতো ডিজাইন)। এটি পরিবেশবান্ধব, স্মার্ট এবং প্রযুক্তিনির্ভর একটি আশ্চর্য স্থাপত্য।

বিশেষত্ব:

  • ৭০০,০০০ বর্গমিটার টার্মিনাল বিল্ডিং
  • প্রতিদিন ৩ লাখ যাত্রী সামলানোর ক্ষমতা
  • রোবট গাইড, স্মার্ট সিকিউরিটি স্ক্যান, এবং ডিজিটাল ইমিগ্রেশন

৪. কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (King Abdulaziz International Airport), সৌদি আরব

  • নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
  • প্রতিষ্ঠা: ১৯৮১ (নতুন টার্মিনাল: ২০২০)
  • অবস্থান: জেদ্দা, সৌদি আরব

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হজ টার্মিনাল রয়েছে এই বিমানবন্দরে। হজ ও ওমরাহর লক্ষ লক্ষ যাত্রীদের সুবিধার্থে তৈরি এই এয়ারপোর্টে বিলাসিতা এবং প্রযুক্তির এক অনন্য মিশ্রণ রয়েছে। সম্প্রতি এর নতুন টার্মিনাল খোলা হয়েছে।

বিশেষত্ব:

  • ৮ লক্ষ হজযাত্রী একসাথে সামলানোর ব্যবস্থা
  • নিজস্ব সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
  • বুলেট ট্রেন সংযোগ
  • গ্লাস ওয়াল, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স এবং আলাদা প্রার্থনাস্থল

৫. ডুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Dubai International Airport - DXB), সংযুক্ত আরব আমিরাত

  • নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ৮.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
  • প্রতিষ্ঠা: ১৯৬০ (সম্প্রসারণ: ২০১৬ পর্যন্ত)
  • অবস্থান: দুবাই, UAE

ডুবাই মানেই বিলাসিতা, আর সেই ধারাবাহিকতায় DXB বিমানবন্দরটিও পিছিয়ে নেই। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি যাত্রী যাতায়াত করেন এখানে।

বিশেষত্ব:

  • স্বর্ণের দোকান, ৭ তারকা লাউঞ্জ, প্রাইভেট স্যুট
  • নিজস্ব মেট্রো সংযোগ
  • বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল-ফাংশনাল এয়ারপোর্ট হোটেল

শেষ কথা:

এই বিমানবন্দরগুলো শুধু ভ্রমণের স্থান নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তি, বিলাসিতা এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতীক। এগুলোর প্রতিটিই দেশের জন্য একটি মর্যাদার বিষয় এবং ভবিষ্যতের ভ্রমণ ব্যবস্থার দিকনির্দেশক।

বিশ্বজুড়ে যাত্রীদের আরাম, নিরাপত্তা ও অভিজ্ঞতার উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত এই বিমানবন্দরগুলোতে যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি, আধুনিক সুবিধা ও স্মার্ট সেবা।

আপনার যদি সুযোগ হয়, কখনো ঘুরে আসুন এই এয়ারপোর্টগুলোতে, বিশ্বাস করবেন না যে আপনি শুধুই একটি “বিমানবন্দরে” এসেছেন!

Comments