নিম গাছ হিন্দু ধর্মে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে দেবী শীতলার পুজোয় নিম পাতার ব্যবহার আবশ্যিক। বিশ্বাস করা হয়, নিম গাছের উপস্থিতিতে দেবীর আশীর্বাদ বাড়িতে বিরাজ করে এবং নানান রোগ-ব্যাধি দূরে থাকে। নিম পাতা শুধু পুজোতেই নয়, ঘরের দরজায় নিম পাতা ঝুলিয়ে রাখা হয় অশুভ শক্তি রুখতে। এটি একপ্রকার প্রতীক যা বাড়ির পবিত্রতা রক্ষা করে।
নিমকে বলা হয় “প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক”। আয়ুর্বেদ মতে, নিমের পাতা, ছাল, ফুল, বীজ, এমনকি রস, সবকিছুই ওষুধ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। চর্মরোগ, জ্বর, বাত ও দাঁতের সমস্যা দূর করতে নিম বিশেষভাবে কার্যকর। বাড়িতে নিম গাছ থাকলে তার পাতার মাধ্যমে আপনি প্রাকৃতিক ঔষধি উপকার পেতে পারেন, যা শরীর ও মন দুটিকেই সুস্থ রাখে।
বাস্তুশাস্ত্রে নিম গাছের স্থান নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাস্ত্র মতে, বাড়ির পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব কোণে নিম গাছ লাগানো সবচেয়ে শুভ ফলদায়ক। এই দিক থেকে সূর্যরশ্মি ও বিশুদ্ধ বাতাস সহজে প্রবেশ করে, যা ইতিবাচক শক্তিকে সক্রিয় করে তোলে। তবে দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে নিম গাছ লাগালে তা ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা বাস্তু দোষের কারণ হতে পারে।
যদিও নিম গাছ নিজে অশুভ নয়, তবে ভুল স্থানে বা অতিরিক্ত বড় গাছ লাগালে তা সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন, গাছের ছায়া যদি সারাদিন বাড়ির ওপরে পড়ে, তবে ঘরে সূর্যালোক প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়। এতে বাড়ির বাস্তু শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া গাছের শিকড় যেন বাড়ির ভিত বা দেয়ালে সমস্যা না করে, সেটাও খেয়াল রাখা জরুরি।
নিম গাছ শুধু বাস্তু বা ধর্মীয় কারণে শুভ নয়, এটি পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এর পাতা ও গন্ধে বাতাস বিশুদ্ধ হয় এবং বিভিন্ন রোগজীবাণু ধ্বংস হয়। বাড়িতে নিম গাছ থাকলে পরিবেশে এক ধরণের স্বস্তিকর ও শান্তিপূর্ণ আবহ তৈরি হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে নিম গাছের ছায়া ও বাতাস অনেকটা ঠাণ্ডা অনুভব করায়।
সবদিক বিবেচনায়, শাস্ত্র অনুযায়ী বাড়িতে নিম গাছ থাকা অত্যন্ত শুভ। এটি একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ করে, অন্যদিকে তেমনি নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং বাস্তুর ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে অবশ্যই সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে এটি রোপণ করা উচিত।
Comments
Post a Comment