এই কুকুরটি গোটা জাপানকে কাঁদিয়েছে! কারণটা জানলে আপনিও কাঁদবেন!

জাপানের টোকিও শহরের ব্যস্ত শিবুয়া স্টেশনের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ব্রোঞ্জের কুকুর। নাম তার হাচিকো। প্রথম দেখায় এটিকে সাধারণ কুকুরের মূর্তি মনে হলেও, এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য ও হৃদয়স্পর্শী ঘটনা, যা আজও মানুষকে আবেগতাড়িত করে তোলে।

হাচিকো ছিল একটি আকিতা জাতের কুকুর। তার জন্ম ১৯২৩ সালে, জাপানের আকিতার ওদাতে শহরে। শীঘ্রই এক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হাইদেজাবুরো উয়েনো তাকে দত্তক নেন এবং টোকিও শহরে নিয়ে আসেন। দুজনের মাঝে গড়ে ওঠে এক গভীর বন্ধন।

অধ্যাপক উয়েনো প্রতিদিন ট্রেনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন। হাচিকো রোজ সকালবেলা তাকে শিবুয়া স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিত এবং বিকেলবেলা স্টেশনে গিয়ে আবার তাকে ফিরিয়ে আনত। এই নিয়ম একটানা চলতে থাকে, যতদিন না ঘটে সেই মর্মান্তিক ঘটনা।

১৯২৫ সালে, একদিন অধ্যাপক উয়েনো কর্মস্থলে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তিনি আর কোনোদিন ফেরেননি শিবুয়া স্টেশনে। কিন্তু হাচিকো সেটা জানত না। সে প্রতিদিন ঠিক বিকেলবেলা স্টেশনের সেই একই জায়গায় এসে বসে থাকত, প্রভুর ফেরার আশায়।

এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য চলতে থাকে একটানা নয় বছর। হাচিকো রোজ অপেক্ষা করত, প্রভু আবার ফিরবে এমন এক আশায়, যা কখনই পূরণ হয়নি। স্টেশনের পথচারীরা, দোকানিরা ও সাধারণ মানুষ তাকে চিনে ফেলেছিল। কেউ কেউ খাবার দিত, কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিত, কিন্তু হাচিকোর চোখে ছিল শুধুই তার প্রভুর জন্য অপেক্ষা।

১৯৩৫ সালে হাচিকো মারা যায়। তার মৃত্যুর খবরে গোটা জাপান শোকাহত হয়। এর আগেই, ১৯৩৪ সালে, হাচিকোর জীবদ্দশাতেই তার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে শিবুয়া স্টেশনের বাইরে একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়। হাচিকো নিজেই সেই মূর্তির উদ্বোধনে উপস্থিত ছিল, এক দুর্লভ সম্মান, যা সাধারণত মানুষের জন্যই সংরক্ষিত থাকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মূল মূর্তিটি ধ্বংস হয়ে গেলেও, যুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে আবার নতুন করে তা নির্মাণ করা হয়। আজও এই মূর্তিটি ভালোবাসা, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের চিরন্তন প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্তমানে, হাচিকোর মূর্তির সামনে হাজারো মানুষ প্রতিদিন ভিড় করেন। এটি শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, প্রেমিকপ্রেমিকাদের জন্যও জনপ্রিয় একটি "মিটিং স্পট"।

Comments